x

ফিতনা-ফাসাদ

পরিচয়

ফিতনা ও ফাসাদ উভয়টি আরবি শব্দ। ফিতনা (اَلْفِتْنَةُ) অর্থ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, কলহ ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় ফিতনা-ফাসাদ বলতে বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয় সৃষ্টি বুঝায়। অর্থাৎ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার বিপরীত অরাজক পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ। মানব সমাজে ভয়-ভীতি, অত্যাচার-অনাচার ইত্যাদির মাধ্যমে নান বিপর্যয় সৃষ্টি করা যায়। এরূপ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ। সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম, খুন, অপহরণ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি ফিতনা-ফাসাদের অর্ন্তরভুক্ত। অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, কলহ, ষড়যন্ত, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদিও ফিতনা-ফাসাদের অন্যরূপ।

কুফল

ইসলাম শান্তির ধর্ম, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। এতে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা কোনো স্থান নেই। বরং ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি ইসলামের মূল ভিত্তি। ইসলামের সকল আচার-আচরণ, বিধি-বিধান বিজ্ঞানসম্মত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। জামাআতে সালাত আদায় এর উজ্জল দৃষ্টান্ত। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, সাদা-কালো সবাই সারিবদ্ধভাবে এক ইমামের নেতৃত্বে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে দাঁড়ায়। সকলে এক সাথে রুকু-সিজদা করে, সালাত আদায় করে। এতে শৃঙ্খলাহীনতার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য বিধি-বিধানও তদ্রূপ। এমনকি এ গোটা মহাবিশ্বও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সুশৃঙ্খল পন্থায় পরিচালিত। কোথাও কোনোরূপ অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনা নেই।

আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনও এরূপ শৃঙ্খলাপূর্ণ হওয়া উচিত। এটাই ইসলামের লক্ষ্য। কিন্তু ফিতনা-ফাসাদ এ লক্ষ্য পূরণের প্রধান অন্তরায়। ফিতনা-ফাসাদের ফলে জীবনের সর্বস্তরেই বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় নেমে আসে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়ে।

যে সমাজে ফিতনা-ফাসাদ প্রসার লাভ করে সে সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না। সমাজের ঐক্য-সংহতি বিনষ্ট হয়। এরূপ  সমাজে মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের কোনো নিরাপত্তা থাকে না। মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে না। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন ও সামজিক আচার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না। ফিতনা-ফাসাদ সমাজে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দেয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ে। এককথায়, ফিতনা-ফাসাদের ফলে সমাজে ও দেশে অরাজকতা দেখা দেয়। শান্তি ও উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ। এর দ্বারা সমাজে সকল অন্যায়-অত্যাচারের দরজা খুলে যায়। অরাজক পরিস্থিতিতে অসৎ মানুষেরা সব ধরনের পাপ কাজের সুযোগ পায়। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

.وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ

অর্থ: “ফিতনা হত্যার চেয়েও জঘন্য।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯১)

ফিতনা-ফাসাদ সমাজে অনৈতিকতার জন্ম দেয়, নিন্দনীয় চরিত্র চর্চার প্রসার ঘটায়। ফিতনা-ফাসাদ সমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে।

ফিতনা-ফাসাদ সম্পর্কে ইসলামি বিধান

ফিতনা-ফাসাদ সম্পূর্ণরূপে ইসলামি আদর্শের বিরোধী। এটি হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

.وَلاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاَحِهَا

অর্থ: “পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৫৬)

পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষ তার অন্যায় ও মন্দকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে নানা ধরনের ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা খুবই জঘন্য চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা তাদের ঘৃণা করেন। তিনি বলেন,

.وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ

অর্থ: “তুমি পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করবে চাইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। ” (সূরা আল-কাসাস, আয়াত ৭৭)

মানব জীবনে ফিতনা-ফাসাদের কুফল ও পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা  সদাসর্বদা এ থেকে বেঁচে থাকব। উত্তম গুণাবলির অনুসরন ও সৎকর্মের মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করব। যেকোনো প্রকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অরাজকতার বিরূদ্ধে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

Translate »
X